পশ্চিম দিগন্তের
অস্তায়মান সূর্যের দিকে ধেয়ে চলা সাদা ঘোড়াটার পিঠে বসে থাকা রাজপুত্রের দিকে অপলক
চেয়ে রইল রাজকন্যা। যতক্ষণ না সেটা একটা চলমান বিন্দুতে পরিবর্তিত হয়।
তিনটি শপথ নিল রাজকন্যা। তিন ভয়ঙ্কর
প্রতিজ্ঞা।
ভালোবাসায়
প্রত্যাখ্যাত সে। তাই ভালোবাসার বাড়িয়ে দেওয়া হাত আর ধরবে না সে। সে আর বিবাহ করবে
না।
লাল গোলাপ দিয়ে
তার মন জয় করেছিল রাজপুত্র। তাই কোনও জীবন্ত মানুষের কাছ থেকে আর লাল গোলাপ
স্বীকার করবে না সে।
এই রাজপ্রাসাদের
বাইরের পৃথিবী থেকে আসা এক রাজপুত্র বিশ্বাসঘাত করেছে তার সাথে। তাই প্রাসাদের
বাইরের দুনিয়ায় ফিরবে না সে।
দিন যায়। দেখতে
দেখতে বছর ঘুরে গেল। রাজ্জপ্রাসাদের হাওয়ায় চাপা কন্ঠস্বর শোনা যায়। পাথরের দেওয়াল
ভেদ করে কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলে।
“রাজপ্রাসাদের
বাইরের পৃথিবী আর ভালো লাগে না আমার। আমাকে রাজপুত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।” উদাস রাজকন্যা বিষণ্ণ কন্ঠে বলে চলে।
রাজমহলের পাথরের
দেওয়াল ভেদ করে চাপা অথচ ভরাট গলায় কে যেন বলে ওঠে, “কেন জানতে পারি কি?”
নিজের দুঃখের
কারন বয়ান করে রাজকন্যা। ফিসফিসিয়েই। সেতারের করুণ সুর বেজে ওঠে দূরে। প্রাসাদের
পাথরের দেওয়ালে দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে বেহালার বিষণ্ণ তান।
তারপর বর্ষা এল।
ধুয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে যত ধূলো-কাদা, পাপ, মান-অভিমান। নতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে
প্রকৃতি আবার একবার সবুজ রঙে উঠলো সেজে।
একলা রাজপ্রাসাদে
রাজকন্যা সারাদিন একা বসে আকাশপাতাল ভাবে। রাজপুত্রের কথা। মহলের দেওয়ালে
প্রতিধ্বনিত হওয়া ভরাট কন্ঠস্বরের কথা। ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যাত সে। তাকে বাঁচতে
হবে। একা।
“বেচারা অহংকারী
রাজকন্যা!” নিজের মনে হাসে লেখক। রূপকথার জগতের সৃষ্টিকর্তা আলস্য ও অবহেলা ভরে
তার হাত দুটোকে বুকের কাছে ভাঁজ করে ফেলে রাখে। আর তার করুণ চোখদুটোর প্রতিচ্ছবি
চলমান ট্রেনের কামরায় উল্টোদিকের কাঁচের দরজায় ট্রেনের গতির সাথে তাল মিলিয়ে আবছা
হতে হতে একসময়ে মিলিয়ে যায়।।
No comments:
Post a Comment