“I speak in the present tense because for us time does not exist, only space. And because it seems only yesterday.”
Saturday, August 22, 2020
Saturday, August 15, 2020
বিড়াল
সকালবেলা খাটের ওপর শুয়ে রুনু কড়িকাঠ গুনছিল l গেল হপ্তায় একদিন পড়ে গিয়ে ওর কোমরে ভারি ব্যাথা, বেচারা হাঁটাচলা করতে পারেনা l এমন সময়ে নীচে ছোড়দার চিৎকার শোনা গেলো l
দালানে বাবার নতুন কেনা স্কুটারের চামড়াটা ফালাফালা করে আঁচড়ানো l এ নিশ্চয়ই মাকুর কাজ l
মাকু রাস্তার বেড়াল l দিন কতক ওদের বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে l অবিশ্যি তা হবে নাই বা কেন, ওকে খেতে দিত পাশের বাড়ির বুলুপিসি আর তার ছেলে কানাই l তারা এখন ছুটিতে সবাই হরিদ্বার বেড়াতে গেছে l
ছোড়দার চিৎকারে সবাই নিচে জড়ো হলো l মাকুকে পাওয়া গেলো না যদিও, কারণ পেলে তখন তার একটা হাড়ও আর আস্ত থাকতো না l
মমতা মাসি সারা সকাল কাপড় চোপড় কেচে কুচে শুকোতে দিয়ে দালানের কাছে বসে রুটি আর চা খাচ্ছিলো, ঠাকুমা তার পাতে আলগোছে আরেকটা রুটি ফেলে দিয়ে বললো, "বেড়াল গুলোকে নিয়ে হয়েছে বড্ড জ্বালা, হয় পায়রা নিচ্ছে নয় এই করছে l একটু বিষ যদি... "
মমতা মাসি সে কথা শুনে ঠাকুমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো l
রুনু ওপরের ঘরের খাটে শুয়ে এসব শুনছিলো l তারপর তার ছোট্ট শরীরটাকে একটু ঘষটে ঘষটে মাথার কাছের জানালাটার কাছে এনে দেখার চেষ্টা করলো বাইরের রাস্তার ওপর মাকুর কোনও চিহ্ন দেখা যায় কিনা l কিন্তু অনেক ইতিউতি খুঁজেও সে তার দেখা পেলো না l অপরাধী বমালসমেত পালিয়েছে l
বাবা দুপুরের আগেই ভাত ডাল খেয়ে মুখে একটা পান গুঁজে গম্ভীর মুখে অফিসে বেরোলেন, তার পেছন পেছন বাবুকাকাও l
দুপুরে খাবার সময়ে রুনু ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো, "মাকু আজ কোথায় খাবে মা? "
মা একগ্রাস ভাতের সাথে একটু পুঁইশাকের চচ্চড়ি মিশিয়ে ওর মুখে পুরে দিয়ে বললো, একদিন উপোস করলে ওদের কিছু হয়না, বুঝলি? "
রুনুর কোমরে খুব ব্যাথা l তাকে এখন রোজই খাইয়ে দিতে হয়, বেচারার উঠে বসে খাওয়ারও ক্ষমতা নেই l
রাত্রে শোবার আগে ছোড়দা বললো, "দেখিস রুনু, এবার ওই মাকুকে আমি আর আস্ত রাখবো না l ইসস, বাবার অতো শখের গাড়িটার কি হাল করলো বল?"
রুনু বললো, "একেবারে মেরে ফেলবে কি? "
"না তো কি?" এই বলে ছোড়দা পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো ll
মাকুটা আবার মনে হয় বাবার স্কুটারের ওই চামড়াটা ফালাফালা করে ছিঁড়ে ফেলবে বলে ফিরে এসেছিলো l কিংবা হয়তো নিছক ক্ষিদের চোটেই l রুনু দেখলো ছোড়দা আর বাবুকাকা মিলে মাকুকে কোণঠাসা করে ফেলেছে l আর তার সাথে হাতে একটা চাবুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা লোক l একে রুনু চেনে l আগের বছর যাত্রায় দুর্যোধন সেজেছিল আর হাহা করে খুব অট্টহাস্য করেছিল l সে এখন তার হাতের চাবুকটা হাওয়াতে হালকা দোলাচ্ছে আর সপসপ শব্দ করছে l মাকু আজ মরবে l
ছোড়দা মাকুর ওপর একটা বস্তা ছুঁড়ে দিয়ে বললো, "এবার একে নিয়ে গিয়ে সোজা নদীর ধারে পুঁতে দিয়ো l" বাবুকাকা আর অট্টহাস্য করা লোকটা সেই বস্তাটা হাতে করে নিয়ে বেরিয়ে গেলো l
রুনু দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে বাবুকাকা দের আটকাতে গিয়েও পড়ে গেলো l আর তখনই তার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেলো l
বাইরে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ l নিচে হাঁকডাক, গরম গরম লুচি আর আলুর তরকারির গন্ধ আসছে l আজ রবিবার l
রুনু কোনোমতে খাট ধরে ধরে নেমে বাইরে এলো l আজ সে একটু হাঁটতে পারছে l বাইরে ছাদের দিকটা আকাশের যতটুকু দেখা যায় ঘোলাটে কালচে মেঘ... টিনের শেড থেকে টুপটাপ জল পড়ছে l পায়রা গুলো নিজের নিজের খোপের মধ্যে বসে বকম বকম শব্দ করে চলেছে l পাশের বাড়ির হারান জ্যাঠা রেডিওতে পুরোনো বাংলা গান শুনছে l
বারান্দার এক প্রান্তে ছোড়দা হাতে একপ্যাকেট বিস্কুট নিয়ে বসে আর তার সামনে দুই থাবা পেতে বসে কুড়মুড়িয়ে বিস্কুট খাচ্ছে মাকু, আর তার ল্যাজটা গুটিয়ে পেছনের দুই পায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা l
রুনু খানিকক্ষণ মাকুর দিকে তাকিয়ে রইলো l তারপর ছোড়দা চোখ তুলে বললো, "বিড়ালটা মার খাওয়ার ভয়ে লুকিয়ে ছিল জানিস? কাল সারাদিন কিচ্ছু খায়নি l কিন্তু মানুষ ছাড়া ওদের আর কেই বা খেতে দেবে, বল?"