শ্রাবনী,
তোমার বিয়ের ছবিগুলো দেখলাম l ভালো লাগলো এটা দেখে যে, যে তুমি একদিন বলতে "বিয়ের কথা বললেই কথা বন্ধ করে দেবো" সেই তুমি ছবিগুলোতে আজ লাল বেনারসী পরে লজ্জা লজ্জা মুখ করে নিজের বরের দিকে তাকিয়ে আছো l আরো ভালো লাগলো এটা দেখে যে, যে তুমি একদিন বলতে "অনাবাসী ভারতীয় তো কক্ষনো নয়", সেই তোমাকেই একজন অনাবাসী ভারতীয়কে বিয়ে করে অনেক, অনেক দূরে চলে যেতে l আমাদের মধ্যের দূরত্ব আর কয়েকটা পাড়ার নয়, কয়েকটা মহাসাগরের l
আচ্ছা, আকাশকুসুম জাহাজ বানিয়ে কি মহাসাগর ডিঙ্গোনো যায়? তাহলে হয়তো আর একবার তোমার সাথে দেখা হলেও হতে পারতো...
মনে আছে শেষবার যখন কথা হয়, আমি বলেছিলাম, "আশা করি এই পৃথিবীর বুকেই কোথাও আরো একটা সমান্তরাল বিশ্ব রয়েছে যেখানে হয়তো আমাদেরই মতো দেখতে দুজন মানুষ রয়েছে, হয়তো অন্যভাবে, অন্য সম্পর্কে l"
সমান্তরাল বিশ্বের স্বপ্নগুলো জানো, অনেকদিন হলো দেখা ছেড়ে দিয়েছি আমি... হয়তো নিজের ভালোর কথা ভেবেই l
আমাকে দিয়ে জোর করে যে দুটো গল্প লিখিয়েছিলে সেগুলো একটা পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে... যদিও সেটা তোমার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর l তাই সে খবরটা জানার সুযোগ তোমার আর হয়নি l তাই এখন চিঠিতেই বলছি l পত্রিকার সম্পাদক ভদ্রলোক একরকম ভালোই, যদিও বড্ড কম কথা বলেন l
এক একদিন যখন বিকেলের দিকে একা ময়দানে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করি, বা প্রিন্সেপ ঘাটে চলতে চলতে সন্ধ্যেবেলা সেই নকুল মাঝির জোরাজুরিতে নৌকো করে গঙ্গার বুকে ঘন্টাখানেক হাওয়া খেয়ে ফিরি, বা হয়তো রবীন্দ্র সরোবরের ধারে গিয়ে ফাঁকায় একটু বসি... মিথ্যে বলবো না, তোমার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়েই যায় l যদিও সঙ্গে সঙ্গে এটা ভেবে কান ধরি যে অন্যের বৌয়ের কথা চিন্তা করাও পাপ l
বিশ্বাস করো যেটুকু জল চোখ থেকে ঝরে পড়ে সবটুকুই তৎক্ষণাৎ মুছে ফেলি, গুমরে ওঠার এতটুকু আওয়াজ অব্দি কেউ পায় না l
অনেক পুরোনো কথাই আজ মনে আসছে কিন্তু এখন আর লাভ নেই l চিঠি শেষ করতে হবে, মনটা আজ ভালো নেই l
পুনশ্চ: এই চিঠি তুমি কোনোদিনও হাতে পাবে না, শ্রাবনী l কারণ ঠিকানাটা তোমার দেশের বাড়ির দিলাম... যেখানে এখন আর কেউ থাকে না l ভালো থেকো l ভুলে যেও ll
No comments:
Post a Comment