Monday, October 10, 2011

সে একলাটি পথ চলে

ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল ঋষি। মেয়েটা একেবারে সামনে। ক্রসিং-এর লাল লাইটে গান বাজছে ‘যদি তারে নাই চিনি গো...’

এতো সকালে পথে কেউ থাকাটাই অস্বাভাবিক। সূর্য্য উঠতে আধ ঘন্টা মতন বাকি। নির্বাচনের এই সময়টায় ভোর থেকেই পথে ঘাটে মাইকে মাইকে গান। স্টেয়ারিং-এ হাত রেখে সে চারপাশে তাকাল। শূন্য সড়ক। আর তার মাঝখান দিয়ে অজগরের মতন চলে গেছে রাজপথ।

মনটা আজকাল আর স্থির থাকতে চায়না। লাল আর সবুজ আলোর দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ল এখন চারিদিকে পরিবর্তনের ঢেউ। কিন্তু কিসের পরিবর্তন? রঙের? মতের? নাকি মনের? সব কিছুর ওপর থেকেই যে তার বিশ্বাস চলে গেছে। কি রঙ, কি মত, আর কিই বা মন। তেইশ বছর হয়ে গেল। মন কেমন করা বিকেলগুলোয় সে একা বসে বসে শুধু ভাবে। মানুষের এই এক বদ অভ্যেস। শুধু ভাবে। কেন ভাবে? কি ভাবে? নিজের কথা। পরের কথা। ভালবাসার মানুষের কথা। ওর বাবা বলে, যারা শুধু ভেবেই চলে তাদের জীবনে কিছু হয়না। ঠিক না ভুল সে জানে না। তার তো ভাবতে ভাল লাগে। নানা কথা। জীবনে কত কি করেছে। ভুল, ঠিক। কাকে কি বলেছে। বলতে পারেনি। যত সব বলা, না বলা কথা মনে ভীড় করে আসে। এক ঝাঁক মানুষের দল। আসে, যায়। কেউ কেউ কাঁদায়। কেউ বা হাসায়। মুখ হল মনের আয়না। লোকের সামনে হাসতে হয়। একা থাকলেই কান্না পায়। কেউ জানে না কেন। কত কি চেয়েছিল ঋষি, কিছুই পেল না। এই ভাবেই জীবন কাটে। একটা গান তার মনে পড়ল... “আমার সাধ না মিটিলো, আশা না ফুরালো, সকলি ফুরায়ে যায় মা”। ঋষি দুঃখবাদী। প্রেমের রোমান্টিসিজম-এ তাকে বেঁধে রাখা শক্ত। তবে পথ হারায় মাঝে মাঝে। আবার ফিরে আসে। ভুল হয়। ভুলে যায় সে কি চায়। আবার মনে পড়ে। বর্ষার রাতে কেঁদে কেঁদে নিজেকে মনে করায়। ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না। শপথ নেওয়া আর ভাঙ্গার মাঝেই জীবন চলে। কেউ ভগবান নয়। দিনের আলোয় যে সুখী, রাতের আঁধারে সেই সবচেয়ে একা। মন না চাইলেও জীবনের নৌকা এগিয়ে চলে। সামনের দিকে। টালমাটাল জীবন। সামলাবে কে? ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে, আমি যে আর পারিনে।‘ চারিদিকে আঁধার। চলেছে এগিয়ে। কেউ জানে না আলো কোথায়। আঁধারে যে হাঁটে সে পেয়েছে এক বৃহৎ আলোর সন্ধান।

বাড়িতে ঋষির আলাদা শোবার ঘর নেই। ভেতরের দিকে একটি ঘর। সেটিতে মা ও বাবা। বাইরের ঘরেই তার শোয়া, বসা, দিন কাটানো। এই ঘরে একটি আত্মা থাকেন। তিনি কে তার জানা নেই। রাতে আসেন, ভোরের প্রথম আলোয় চলে যান। লম্বা ঘর। এক কোনায় তিনটে চেয়ার পাতা। রাত গভীর হলে তার পায়চারি। অন্ধকারে মিশে যেতে ভাল লাগে। মনে হয় কেমন অদৃশ্য হয়ে পৃথিবীটাকে দেখছে। নিজেকে ভগবান মনে হয়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একা লাগে। শূন্য বিছানার দিকে চোখ পড়ে। ছায়া ঘুমোয়, না কায়া। গভীর রাতকে মাঝে মাঝে বন্ধু মনে হয়। মাঝে মাঝে অচেনা। শত্রু। ভাবায়। হাসায়। কাঁদায়। কে যেন বলে গেছে সাধারন মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র এক-চতুর্থাংশ ব্যাবহার করে। তাতেই এত কিছু। যোগীরা নাকি আরো বেশি। তাতেই তাদের শক্তি। অলৌকিক কতো কি শোনা যায়। সে কিছুই দেখল না। মানুষের জানার পরিধি কত সীমিত। মন কে বলে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়তে। পারেনা। ডানার জোর না থাকলে পাখি উড়তে পারেনা। পথ হেটে চলে। একা একা। কথা বলে। নিজের সাথে নিজের তর্ক। একবার এ জেতে তো আর একবার ও। নিজেকে হারিয়েই সন্তষ্ট হয়। সে জানে সে অন্যকে হারাতে পারবেনা। কোনদিনই পারেনি। লাভের মধ্যে ভালবেসে ফেলল। এমন একজনকে যে তাকে চায়না। কোনদিন চাইতে পারেনা। শ্রীজিতা সে। তার সংস্কার, সে কি চায় সব গুলিয়ে ফেলে বলে বসল, ‘ভালবাসি’। একবার নয়, দু দুবার। সেই আওয়াজ পাথরের দেওয়ালে লেগে ফিরে এল। অনুমতি নেই। ছিল না। থাকবে না। পূজার ফুল বাসী হল। চোখের জলে বাধ্য হয়ে তাকে সব ধুয়ে ফেলতে হল। কিন্তু ধরে রাখতে পারল না। তাঁর পূজার ফুল তিনি নিয়ে গেছেন। ঘ্রানটুকু নিয়ে গেলেন। বাকিটা পড়ে রইল।

এদিকে মন বড়ই উচাটন। ভালবাসা চায়। কি আর করা? দেরাদুনের এক হস্টেলে সে মানুষ। যে সময়ে মানুষ নিজের মা বাবা কে চায়, সে পেয়েছে বন্ধুবান্ধব। এখন তারা বাইরে বাইরে। নিজেদের জগৎ। না পারে তাদের বলতে, না পারে বাড়িতে নিজের দুঃখের কাহিনী মেলে ধরতে। অগত্যা মনেই সব। সেখানেই শুরু, সেখানেই শেষ। যাকে ভালবেসেছিল তাকে না পেয়ে একদিন যাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত তার কথা মনে করে। পল্লবী। তিনি আরো মহান। অহংকারের চূড়ায় বসে মনোনিবেশ করেছেন অন্য কাজে। বৃক্ষের সাথে নুড়ির কি সম্পর্ক? হাত বাড়ালেও পাওয়া যায়না। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে সিংহাসনের স্বপ্ন। তাতেও আনন্দ। মানুষের মন বড় জটিল। তল বোঝা ভার। কার মনে কি আছে কে জানে? নিজে কি চায়, তাই কি ছাই জানে? একবার এ ঘাট, তো আর একবার ওঘাট। লজ্জা ঢাকতে খান দুই টুপি কিনে ফেলল। ওই মাথায় দিয়েই চলছে। রাস্তায় চেনা কেউ সামনে পড়ে গেলে টুপি দিয়ে মুখ ঢাকে। ভাবটা এমন যেন দুনিয়া সুদ্দু লোক তার কীর্তিকলাপ জেনে বসে আছে।

আজ এই শূন্য সড়কের ওপর ড্রাইভ করতে করতে তার মনে পড়ল সর্বদা সবাই তাকে একটু এড়িয়ে এড়িয়েই চলত। বন্ধু-বান্ধব, চেনাজানা কারোর সাথে ওরও বেশি মাখামাখি করতে ইচ্ছে করেনা। তার ব্যাপারে লোকে জানুক, তাও চায়না। কি যে চায়, সেটাই বোঝেনা। ছোটবেলা থেকেই এই। বাড়ির বাইরে গিয়ে আরো কেমন হয়ে গেল। নিজের লোকেদের নিজের মনে হয়না। সবটাই কেমন ছাড়াছাড়া। বেহিসেবী। কে একজন ওর হাত দেখে বলেছিল, এই ছেলের সন্ন্যাস আছে। হায় ভগবান। ওই জানে ওর কি আছে। ওই লাইন তার নয়। অনেক সাধনা দরকার হয়। ত্যাগ দরকার হয়। নিজেকে মাঝে মাঝে ওর মুখোশ পরা এক শয়তান মনে হয়। কি চায়, কি করে ফেলে। কি বলতে চায়, কি বলে ফেলে। প্রেতাত্মা মনে হয় নিজেকে। একা একা হাটছে। পথ আর ফুরোয় না। হিসেবি মানুষ ধরে ফেলে। চীৎকার করে বলে, কি করছিস রে। চোখের পাতা আর পড়ে না। আগুন দেখেছে সে। জ্বলতে চায়। নিজের ভেতরটা একদম পুড়িয়ে নিজেকে শেষ করে তবে ছাড়বে। ত্রিকোন প্রেম, ডিভোর্স, আত্মহত্যা যোগ, সংসার, সন্ন্যাস কোনোটিই তো আর বাকি রাখেনি এই হাতে। লাফ দাও এই সাগরে। খেলো আগুন নিয়ে। কারোর মানা নেই। গেছিলে জ্যোতিষীকে ভুল প্রমান করতে। ফিরে এলে তো মাথা নিচু করে? কারোর কারোর এই জিনিসটা থাকে। সবাইকে ভুল প্রমাণ করার তাগিদ। তুমিই ঠিক, গোটা জগৎ ভুল। এবার ঠেলা সামলাও। তোমার জগৎকে আধখানা করে দিয়ে চলে গেল। অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল ভবিষ্যৎবাণী। কে আপন, কেই বা পর।

শুয়ে শুয়ে সে স্বপ্ন দেখে। বেনারস চলেছে। পথে হাজার লোক। এক একটা ঘটনা এমন থাকে মনকেও বিশ্বাস করানো যায়না। বেনারসের ওপর একটা অদ্ভুত টান ছিল। পল্লবীর কথা জানার পর সেটা আরো বেড়ে গেল। বেড়ে গেল সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু তার কি চাই সে তাই জানেনা। কেন যেতে চায়। পল্লবী কে খুঁজতে? সে তো তার বাড়ী থেকে একশ পা দূরেই থাকে। তার ছেলেবেলা খুঁজতে চায়? তা সে এখন কোথায় পাবে? মনের মধ্যে ঝড় ওঠে। পুরনো সব কথা। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে।

জীবনের যত আলসে দুপুরগুলো। নরম নরম। ধরনটা কেমন মেয়েলী মেয়েলী। আকাশ পাতাল ভাবতে ইচ্ছে করে। আগে এটা ছিল না। ইদানিং হয়েছে। সব কিছু নিয়েই ভাবতে ভাল লাগে। বাইরের ঘরটাই এরকম। লোক তো লোক। কেউ নেই তো সব ফাঁকা। বেমালুম। মনে হয় কোনো এক দৈত্য যেন ভোজবাজির মতোন সব মুছে দিয়েছে। এই সময়ে একা একা ভালো লাগেনা। শ্রীজিতার কথা মনে পড়ে। মনকে বোঝালেও সে বুঝবে কেন? ভালোবাসা এমনই। সব নিয়ে চলে যায়। তার আবার আর এক ঝামেলা। লাল এক চেয়ার। বিছানার উল্টো দিকে তার দিকে মুখ করে আছে। সারা দিনই এরকম। রাত্রে মুখ ঘুরিয়ে দিলেও সকালে উঠে দেখা যাবে এদিকে হয়ে বসে আছেন। কোন একজনের অবাধ প্রবেশ আছে এই ঘরে। তিনি কে তা সে জানে না। জানতে চায়ও না। তিনি শুধু দেখেন। ঋষি কি করছে। মনে মনে একদিন সে বলেও ফেলেছিল, ‘আপনি যদি কোন শুভ আত্মা হন, আমাকে আমার ভালবাসা ফিরিয়ে দিন।‘ বলেই জিভ কেটেছে। কে ভালবাসা। কার ভালবাসা। এ সংসার শুধু দেহ দিয়ে গড়া। দেহ চায় দেহকে। মনের খবর কে রাখে। তায় আবার ভালবাসা। মাঝে মাঝে ভয় হয় সংসার থেকে মন উঠে যাচ্ছে না তো? সব কিছুই কেমন যেন আলগা আলগা। জীবনের প্রথম দিকটায় একা থাকার ফলে সে কেমন একটা রুক্ষ হয়ে গেছে। সবেতেই মেকী মেকী ভাব। আবার কারনে অকারনে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তবে একটা ফন্দি বের করেছে। জার্মান একটা সিনেমার থিম মিউজিক মোবাইলে তুলে নিয়েছে। গভীর রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে গেলে ওটা শোনে আর কাঁদে। বালিশ ভিজে যায়। কিন্তু সে পরোয়া করেনা।

সন্ধের পর ঋষি রাস্তায়। হাটছে আর হাটছে। এ যেন একটা খেলা। নিজেকে আবিষ্কার করার। নিত্যনতুন চলছে। একই রাস্তা। একই মানুষজন। চেনা, অচেনা মানুষ। চোখ খোঁজে পুরোনো কাউকে। পায়না। আর খুঁজে পেলেই বা কি? কেউ কারোর জন্যে অপেক্ষা করে থাকেনা। দুনিয়াটা অনেক বড় জায়গা। নিজেকে সামলানোই আসল জিনিস। কারোর হয়, কারোর হয়না। ফাঁদে পড়ে যায়, ছটফট করে, কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারেনা। কেউ কেউ পারে, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যায়। জীবনটাই এরকম। এই আছে, এই নেই। সূক্ষ সূতোর মতন তফাৎ। বুদবুদের মতন। হঠাৎই সব কিছু থেমে যায়। এই দিন, তো এই রাত। জীবন বড়ই অদ্ভুত। হাসি দিয়ে শুরু। কান্না দিয়ে শেষ। কিন্তু মাঝের সময়টা...ওটাই সব। নিক্তি দিয়ে বিচার হবে, কি দিলে, কি নিলে। যার ভান্ডারে বেশি রইলো, সে জিতে গেল। রবার্ট ফ্রষ্ট লিখেছেন, A poem begins in delight and ends in wisdom. এও সেরকমই। লক্ষ্য রাখো কি শিখছ। কি জানছো। পাখির চোখ। তবে এই সব কথা সে কাউকে বলেনা। নিজের মনেই রেখে দেয়। কখনও বা লিখে রাখে। অনেকদিন পরে, কাল রাত্রে সে একটা লেখা শেষ করেছে। ডায়রীটা পেছনের সীটে ব্যাকপ্যাকের মধ্যে রাখা।

ব্রীজ-এ ওঠার মুখে বাঁদিক ঘেঁসে গাড়িটা পার্ক করায় ঋষি। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাওড়া ব্রীজ। প্রকান্ড এক দানবের মতন। ধূসর, প্রাণহীন এক ধাতব দানব। গাড়ির ব্যাকসীট থেকে নিজের ব্যাকপ্যাকটা বের করে পীঠে ঝুলিয়ে নেয় সে। ঠিক দু’শ পা হাটলে সে পৌঁছে যাবে ব্রীজের ঠিক মাঝখানে। সে হাটতে থাকে।

কয়েক মিনিটের মধ্যে সে পৌঁছে যায় ব্রীজের ঠিক মাঝখানে। ভোরের আকাশ। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হয়তো সূর্য্য উঠবে। একটা পায়রা দূর থেকে উড়ে এসে ব্রীজের ধাতব রেলিং-এর ওপর বসে। পাখিটার দিকে তাকিয়ে ঋষি চিন্তা করতে থাকে। তার সামনে এখন দু’টো রাস্তা। এক, গল্পের নায়ককে মেরে ফেলা, যা সে অধিকাংশ গল্পের ক্ষেত্রে করে থাকে...হয়তো আত্মহত্যা! এতো সহজ! একজন যে জীবনে প্রায় সব কিছুই হারিয়েছে, এখন শুধু একটা লাফ মাত্র, আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে এই মরণশীল দুনিয়ার বাইরে। হয়তো এটা মিলনান্তিক শেষ হবেনা, কিন্তু মৃত্যু মানুষের বুকে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যায়...এই গল্প হয়তো আর কেউই ভুলতে পারবেনা।

কিন্তু তারপরে, সে দ্বিতীয় রাস্তার কথা চিন্তা করে।

সে তার ব্যাকপ্যাক থেকে তার ডায়রীটা বের করে আনে। আগের রাত্রের লেখা গল্পের পাতাগুলো বের করে সে। আঠারোটা পাতায় তার সেই পুরোনো নীল পেনটা দিয়ে লেখা গল্প। আঠারোটা পাতায় লেখা ‘আমি একলাটি পথ হাটি’, তার জীবনের দুঃখ আর কষ্টের কাহিনী। লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে তার চোখ জলে ভরে যায়। হঠাৎই তার পাশ দিয়ে কিছু পাখি উড়ে গঙ্গার অন্য দিকটায় চলে যায়। পূর্বদিকটা লাল হয়ে আসছে। আর ঋষি দাঁড়িয়ে আছে পবিত্র গঙ্গানদীর ওপর সর্বোচ্চ স্থানে।

পৃষ্ঠাগুলোকে ভাঁজ করে ছিঁড়ে ফেলে সে। আর তারপর সেই ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলোকে আবার দু’ভাঁজ করে ছিঁড়ে ফেলে। বাহাত্তর খন্ড হয়ে যায় তার গল্পের। তার হৃদয়ের বাহাত্তরটা খন্ড। তার মূল্যবান হৃদয়ের খন্ড।

আর তারপরেই সেগুলোকে সে হাওয়াতে ছুঁড়ে দেয় ব্রীজের ওপর থেকে। আকাশ ভরে যায় কাগজে... হাওয়াতে কাগজের টুকরোগুলো উড়তে থাকে। মুক্তির আনন্দে তারা যেন অজানা সুরে নাচতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাগজের টুকরোগুলো নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এইবার সূর্য্য উঠবে।

ভোরের আলোয় পৃথিবীকে নতুন ভাবে দেখে ঋষি। পরিবর্তন সেও চেয়েছিল। তবে সেটা রঙের নয়, মতের নয়...মনের। আজ হয়তো সে সেটা পেয়েছে। যে লোহার শেকল ছিল তার পায়ে, তার হাত থেকে আজ তার মুক্তি হয়েছে। হাওড়া ব্রীজের ওপাশে স্টেশনের লাগোয়া দোকান গুলোর পাশ থেকে পাখীগুলো সারি বেঁধে বেরিয়ে আসতে থাকে। কয়েকটা বাস, আরো কয়েকটা ট্যাক্সী...এবার শহরের সরব হওয়ার পালা।

পূর্বের লাল আকাশের দিকে চেয়ে ঋষি এক নতুন নিজেকে খুঁজে পায়।


-Sent for the Anandabajar Patrika reader's writing contest '11

No comments:

Post a Comment